ডেস্ক নিউজ:

আগামী নির্বাচনের আগে সরকারি কার্যক্রমকে জনগণের সামনে আরও গতিশীল ও দৃশ্যমান করার লক্ষ্য নিয়ে শিগগিরই মন্ত্রিসভায় রদবদল আসছে। সেইসঙ্গে, মন্ত্রীদের দায়িত্ব পালনে অদক্ষতা ও নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়া মন্ত্রীদের বাদ দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে এ রদবদলে।

একাধিক মন্ত্রী এবং সরকারদলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। রাজনৈতিকভাবে দক্ষ নেতাদের মন্ত্রিসভার অন্তর্ভুক্ত করে রাজনৈতিক সুফল ঘরে আনতে এ রদবদলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন দু’জন শীর্ষ নেতা।

এদিকে, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ বার্তা পেয়ে নড়েচড়ে বসছেন দলের ত্যাগী ও নতুন নেতারা।

মন্ত্রিসভার একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, কিছু মন্ত্রীর দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য শেখ হাসিনার সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। এছাড়াও মন্ত্রণালয়ভিত্তিক নানা অনিয়মের সঙ্গে কোনও কোনও মন্ত্রীর জড়িয়ে পড়ার তথ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রায় শেষ সময়ে এসে রদবদল ও কিছু মন্ত্রীকে বাদ দেওয়া সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

মন্ত্রিপরিষদে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন মন্ত্রী জানান, নির্বাচনের আগে মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ওঠা এমন নানা অভিযোগ বিরোধীমহল পুঁজি করে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হতে পারে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে সে আশঙ্কাও রয়েছে। তাই বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে সরকারি কাজকে আরও গতিশীল করতে রদবদলে আগ্রহ দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে এ গুঞ্জনে মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য বাদ পড়ার আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। আর দলের কয়েকজন নেতার মধ্যে মন্ত্রী হতে পারেন এমন উচ্ছ্বাসও তৈরি হয়েছে। উচ্ছ্বসিত নেতারা প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে তথ্য জানতে প্রতিদিনই খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এসব নেতা তথ্য জানতে চেষ্টা করছেন সাংবাদিকদের কাছেও, কখন হবে রদবদল।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিসভার রদবদল হলে কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব পালনে অদক্ষতাসহ নানা কারণে বাদ পড়তে পারেন। আবার দলীয় কাজে অবদান রাখা কয়েকজন সংসদ সদস্য প্রত্যাশা করছেন তাদের মন্ত্রিপরিষদে জায়গা দিয়ে পুরস্কৃত করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে শেখ হাসিনার গুডবুকে কাদের নাম আছে আর কারা ঝড়ে পড়ার তালিকায় তা জানেন কেবল প্রধানমন্ত্রী নিজে।

এর পরেও বেশ কিছু নাম আছে আলোচনায়। এদের মধ্যে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ যেমন আছেন তেমনই আছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনও। পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্ব ব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে সরে যেতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু কয়েক বছর পরে অভিযোগ মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় আবার তাকে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় ফেরাবেন এমন গুঞ্জন আছে দলটির নেতাদের মধ্যে। এছাড়াও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমান, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনসহ আছেন আরও অনেকেই আলোচনায়। এছাড়াও জেলা পর্যায়ের কয়েকজন ত্যাগী নেতার নামও আছে আলোচনায়।

কয়েকজন জ্যেষ্ঠমন্ত্রীর ধারণা, রদবদল হলে মন্ত্রিপরিষদে অন্তত অর্ধডজন নেতা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করবেন। দুই একজন পূর্ণ মন্ত্রীও হতে পারেন। তাছাড়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পদ ফাঁকাও রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, বতর্মান মন্ত্রিসভা থেকে দুই/চারজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বাদও যেতে পারেন। তবে ওই সূত্রটি তাদের কারও নাম বলতে রাজি হননি।

জানা গেছে, বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বিষয়ে নানা রকম খোঁজ খবর নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন সংস্থা তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে প্রধানমন্ত্রীর হাতে দিয়েছেন। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালনে সততা, নিষ্ঠা কতখানি বজায় রেখেছেন কোনও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কিনা এমন কিছু বিষয়ের ওপর তথ্য চেয়েছেন শেখ হাসিনা। জানা গেছে, আবার কয়েক জন নতুন ও পুরনো নেতারও তথ্য সংগ্রহ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের দলীয় রাজনীতিতে অবদানসহ বিভিন্ন তথ্য জানতে চেয়েছেন তিনি।

এসব তথ্য যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হলে মন্ত্রিসভা রদবদলের চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঠিক করবেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। সূত্র জানায়, সরকারের কাজে প্রাণ সঞ্চার আনতে মন্ত্রিসভার রদবদল একটি রুটিন কাজ হলেও নানা কারণে দেরি হয়েছে রদবদল।

২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি টানা দ্বিতীয় বারের মত সরকার গঠন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫২ সদস্যের মন্ত্রিসভায় ৩২ জন পূর্ণ মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও ২ জন উপমন্ত্রী রয়েছেন। এ পর্যন্ত তিন দফা রদবদল হয় মন্ত্রিসভা। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই মন্ত্রিসভায় রদবদল হয়। এরপর মন্ত্রিসভায় রদবদলের আলোচনা ও গুঞ্জন কয়েক দফা হলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রদবদলের সম্ভাবনার কথা তার বক্তব্যে বলেন।

এরমধ্যে একবার দফতর বন্টন ও পদোন্নতি দেওয়া হয়। তারপরেও পূর্ণ মন্ত্রীর পদ ফাঁকা রয়েছে টেলিযোগাযোগ; বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ; মহিলা ও শিশু; বস্ত্র ও পাট; যুব ও ক্রীড়া; সমাজকল্যাণ; শ্রম ও কর্মসংস্থান; তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ে। এগুলো চলছে প্রতিমন্ত্রী দিয়ে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, মন্ত্রিসভায় রদবদলের এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এ ব্যাপারে তিনিই সব জানেন। আমি কিছু জানি না।

সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছে। কখন হতে পারে এই প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রী এখতিয়ার। তাই তিনিই ঠিক করবেন কখন হবে রদবদল।